“বিদ্যুৎ আর কারেন্ট একই কিনা ? পর্ব-০১
“বিদ্যুৎ আর কারেন্ট একই কিনা ? এই প্রশ্নটি একটি বিতর্কৃত প্রশ্ন । এই প্রশ্নের উওর দিতে হলে আগে কিছু বিষয় বিশ্লেষন করে তারপর সিদ্ধান্তে আসতে হবে । আর কেউ যদি আমার কাছ থেকে এক কথায় উওর জানতে চান তাহলে আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে বলব না , একই না ।আর আমার উওর সম্পর্কে যুক্তি জানতে চাইলে আপনাকে পড়তে হবে সম্পূর্ণ পোস্টটি ।
চলুন আমরা প্রথমে বিদ্যুৎ সম্পর্কে জেনে আসি । বিদ্যুৎ কি? তার উওরে আপনি বিভিন্ন বই বা বিভিন্ন ওয়েবসাইডে যা পাবেন তা হচ্ছে ,“বিদ্যুৎ এক প্রকার অদৃশ্য শক্তি যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং ক্রিয়া অনভূব বা অনুধাবন করা যায় । ” আর প্রাপ্ত বিদ্যুতের সংজ্ঞা বুঝতে হলে আমাদের কিছু প্রশ্নের উওর জানা লাগবে
প্রথম প্রশ্ন শক্তি কি? আমরা সহজে তার উওর বলতে পারি কাজ বা ক্রিয়া করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে । তার মানে বিদ্যুৎ দ্বারা আমরা যেকোনো ক্রিয়া বা কাজ করতে পারি । যা বাস্তবে করছি । আবার আমরা জানি শক্তিকে কখন ধ্বংস বা সৃষ্টি করা সম্ভব নয় শুধুমাত্র রুপান্তর করা যায় । অর্থাৎ আমরা বিদ্যুৎ শক্তিকে অন্য শক্তিতে রুপান্তর করতে পারব ।
এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে ,“বিদ্যুৎ এর উৎপত্তি বা এর প্রকৃতিটা কি? বিদ্যুতের উৎপত্তি বা প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে হলে আমাদের প্রথমে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে অবগত থাকা লাগবে । আমি মনে করি আমরা সকলে পরমাণু সম্পর্কে অবগত আছি । তাইলে পরমাণু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে মূল বিষয় “বিদ্যুৎ কি ” তা বুঝার চেষ্টা করি । পরমাণুর মধ্যে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট দুটি কণা রয়েছে যাদের নাম হচ্ছে প্রোটন এবং ইলেকট্রন । দুটি একই ধরনের চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং দুটি বিপরীত ধরনের চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে । আর আমরা এটাও জানি যে প্রতিটি পরমাণুতে সমান সংখ্যক ধনাত্মক আর ঋনাত্মক চার্জ বিদ্যমান । কিন্তু যখন কোনো পরমাণু হতে ইলেকট্রনকে কোনো শক্তির মাধ্যমে অপসারন করা হয় তখন উক্ত পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের পরিমান বেশি থাকে । আবার যখন কোনো পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে তখন উক্ত পরমাণুতে ঋনাত্মক চার্জের পরিমান বেড়ে যায় ।
মনে করি A একটি পদার্থ যা হতে ইলেকট্রন অপসারন করার কারনে A এর মধ্যে ধনাত্মক চার্জের পরিমান বেশি । আবার B আরেকটি পদার্থ যা ইলেকট্রন গ্রহণ করার কারনে B এর মধ্যে ঋনাত্মক চার্জের পরমিান বেশি । এখন আমরা ব্যবহারিকভাবে পরীক্ষা করলে দেখতে পাব যে A পদার্থে এবং B পদার্থের চারপাশে একটি শক্তি বিদ্যমান। অর্থাৎ A পদার্থের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে যদি কোনো ধনাত্মক বা ঋনাত্মক চার্জ আনা হয় তাহলে দেখা যাবে যে আনিত পদার্থটিকে A পদার্থ আকর্ষন বা বিকর্ষন করছে । ঠিক একই ভাবে B পদার্থ থেকে এমন ঘটনা দেখা যাবে । এখন প্রশ্ন “যখন A ও B পদার্থ থেকে ইলেকট্রন অপসারণ বা গ্রহন করা হয়নি তখন কি এমন আকর্ষন বা বিকর্ষন বল দেখা গিয়েছিল ?” নিশ্চয় না । তার মানে আমরা এখন বলতে পারি A ও B পদার্থের মধ্যে একটি অদৃশ্য বল বিদ্যমান । আর উক্ত বলের কারনে একটি নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত A অথবা B ধনাত্মক বা ঋনাত্মক চার্জের উপর কাজ করতে সক্ষম । যেহেতু A অথবা B এর মধ্যে কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে সেহেতু আমরা বলতে পারি A অথবা B এর মধ্যে অদৃশ্য শক্তি নিহিত রয়েছে । আর এই অদৃশ্য নিহিত শক্তিই হচ্ছে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ । যার কারনে আমরা বলি , “বিদ্যুৎ এক প্রকার অদৃশ্য শক্তি যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং ক্রিয়া অনুধাবন করা যায় ।”
এখন হয়তো আমার এই বক্তব্য বা ব্যাখ্যা পড়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটবে । কেউ কেউ বলবে আকর্ষন -বিকর্ষন বল আর বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য কি ?
আবার কেউ কেই বলবে যে পদার্থের মধ্যে ধনাত্মক চার্জের পরিমান বেশি সে পদার্থ চায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রন গ্রহন করে স্থিতিশীলতা অর্জন করতে । যার ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় । তাহলে রাসায়নিক বিক্রিয়া আর বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ? হ্যা বন্ধু এমন সব হাজার প্রশ্নের উদয় হয় সবার মনে যখন আমরা বিদ্যুতের প্রকৃত ব্যাখ্যা জানতে চাই । তাই জনৈক লেখক বলেছেন “বিদ্যুতের প্রকৃতি ব্যাখ্যা দিতে গেলে আমাকে ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বই রচনা করতে হবে ।” যার কারনে তিনি তার বইতে বিদ্যুতের ছোট্ট একটি সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন , “ আপাতত এই ছোট্ট ব্যাখ্যাটি মনে রাখলে চলবে । ব্যাখ্যাটি হলো , বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি , যা খালি চোখে দেখা যায় না , যার ক্রিয়া অনুভব বা অনুধাবন করা যায় ” আর যেহেতু বিদ্যুতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমার পোস্টটি বড় হচ্ছে সেহেতু আজ এখানে সমাপ্ত করে বাকি সব প্রশ্নের উওর এবং আলোচনা পর্ব -০২ এ পাবেন।
“ধন্যবাদ সবাইকে, আল্লাহ আমাদের সহায় হউক ”
No comments